“জঙ্গি” শব্দ নামক ভয়ানক অস্ত্র: আমার অভিজ্ঞতা

যখন ‘শাহবাগ চেতনা’ প্রসব করেছে, তখন দেশে ফেরা  আমার (৫ মে ২০১২)।  প্রায় ১১ বছর National University of Singapore (QS ranking #8) গবেষণা ট্রেইনিং শেষে ফজলে আবেদ সাহেবের বিশ্ববিদ্যালয়ে মাইক্রোবায়োলজির এসিস্টেন্ট প্রফেসর হিসেবে জয়েন করি। ক্লাস শেষে হেঁটে, রিক্সা এবং…

যখন ‘শাহবাগ চেতনা’ প্রসব করেছে, তখন দেশে ফেরা  আমার (৫ মে ২০১২)। 

প্রায় ১১ বছর National University of Singapore (QS ranking #8) গবেষণা ট্রেইনিং শেষে ফজলে আবেদ সাহেবের বিশ্ববিদ্যালয়ে মাইক্রোবায়োলজির এসিস্টেন্ট প্রফেসর হিসেবে জয়েন করি। ক্লাস শেষে হেঁটে, রিক্সা এবং পাবলিক বাসে বনশ্রীর বাসায় ফিরে ক্যান্সার গবেষণার কাজ করতে করতে গভীর রাত পর্যন্ত অমানসিক পরিশ্রম করা ছিল স্বাভাবিক রুটিন। 

এক

উত্তাল শাহবাগের সময়টাতে রিক্সায় কড়াইল বস্তির সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশ জঙ্গি সন্দেহে রিক্সা থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করত। এই অপমান এতই কষ্ট দিতো যে আবার প্রবাসে ফেরত যাওয়ার পরিকল্পনাও করেছিলাম। মানসিক যাতনা লাগবে ছদ্মনামে ব্লগিং করতাম। তখন এই বিষয়ে কথা বলাও যেত না। 

দুই

২০১৬ সালে নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ফ্যাকাল্টি হিসেবে আবেদন করেছিলাম। তৎকালীন ডিনের সাথে সাক্ষাৎ করিয়ে দেন আরেক ডিন। আমাকে যেন বিবেচনা না করা হয় সেজন্য শিক্ষকদের মধ্য থেকে জঙ্গী বলে অপপ্রচার করা হয়। এমনও মিথ্যা বলা হয়েছে যে সিংগাপুরে থাকাকালীন সময়ে নাকি জঙ্গিদের সাথে সরোয়ারের ছবি পর্যন্ত আছে!

সিংগাপু্রের সিকিউরিটি সিস্টেম আমেরিকার চেয়েও নিখুঁত। খুব কষ্ট হয়েছে। এর কিছুদিন পর সেই ডিন সাহেব (যিনি পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন) কিছু ইমোশনাল হয়ে ফোন করে জানান, সরোয়ার তোমাকে যারা জঙ্গি ট্যাগিং করেছিল তাদের একজন হলি আর্টিজেনের ঘটনায় গ্রেফতার হয়েছেন। তিনি বললেন, এটা আল্লাহর বিচার…  

তিন

আইইউবিতে ফ্যাকাল্টি হিসেবে সিলেক্টেড হওয়ার পর  জঙ্গি ইস্যুতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে ব্যাকগ্রাউন্ড চেক করা হয়। আব্বা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন কিনা সেজন্য এলাকার কমান্ডার সাহেবের সাথেও যোগাযোগ করে নিশ্চিত হয়েছেন।

চার

সেই শরীফার (ট্রান্সজেন্ডার) ইস্যুতে নর্থ সাউথের ঘটনার পর বিকৃত রুচির মানুষটির সাথে মিলে এক গ্রুপ আমাকে জঙ্গি ট্যাগিং দেয়। আইইউবিতে যোগাযোগ করে। এরপর ডিবি পিছনে লাগে। এখানে সম্ভবত সুপারকপও জড়িত ছিলেন। কেননা সেই গ্রুপের সাথে সুপারকপের সখ্যতা ছিল, যা অনলাইনে ভাইরাল হয়েছিল ছাত্র আন্দোলনের আগে। সুপারকপ  নর্থ সাউথের সাবেক শিক্ষার্থী। পরে সেখানে পার্ট-টাইম শিক্ষক এবং ডিবি অনলাইন টেরোরিজম ব্রাঞ্চে কাজ করতেন (ফেসবুকে তিনি হুমকি-দামকি দিতেন)। 

শরীফার ঘটনায় আসিফ মাহতাবের বই ছেঁড়ার ঘটনার পর আমাকে চাকুরীচ্যুত করার গ্রাউন্ড তৈরী করেছে সেই জঙ্গি ইস্যুতে। টার্মিনেটশন লেটারও তৈরী করা হয়েছিল। অবশেষে আল্লাহ রক্ষা করেছেন।  

অবাক করা বিষয় হচ্ছে আমার পেছনে পড়া একজন আমেরিকায় পড়ার সময় আমাকে ফোন দিয়ে দোয়া চেয়েছেন। আমার পোস্ট পড়ে নাকি অনুপ্রাণিত হতেন। দেশে ফিরে সেই মানুষটি একদম বদলে যান…   

আমি মুসলিম গবেষক, শিক্ষক। আমার আইডেন্টিটির কথা প্রকাশ্যে বলে তৃপ্তি পাই। 

জাস্ট মুসলিম আইডেন্টিটির কারণে ৯০% মুসলিমদের দেশে শব্দ সন্ত্রাস করে নিরীহ হাজার হাজার মানুষকে বিনা বিচারের জেলে ভরা হয়েছে, আয়না ঘরে বছরের পর বছর নির্যাতন করা হয়েছে।

মনে রাখবেন, 

শহিদ আবু সাঈদ নিজের মুসলিম আইডেন্টিটির জন্য গর্ব করত। ছাত্র আন্দোলনের আহত-নিহতের বেশীর ভাগ ইসলাম ধর্মকে ভালবাসেন। যারা মুসলিম পরিচয় নিয়ে তৃপ্তি পান তারা সত্যিকারের দেশপ্রেমিক।

জঙ্গি সংস্কৃতি পরিহার করুন, ন্যায় বিচার কায়েম করুন। আমরা আর পুরাতন বাংলাদেশে ফেরত যেতে চাই না।

Similar Posts