ডা জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ব্র্যাকের ফজলে আবেদ এবং প্রফেসর ইউনুস- উনারা কি এ যুগে পারতেন?

ব্যক্তিগত উদ্যোগ দিয়ে একটি রাষ্ট্র বেশী দূর আগায় না। রাষ্ট্রের দায়িত্ব হচ্ছে ব্যক্তিগত উদ্যোগগুলো কাজে লাগিয়ে শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান তৈরী করা।

ডা জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ব্র্যাকের ফজলে আবেদ এবং প্রফেসর ইউনুস- উনারা কি এ যুগে পারতেন?

সংক্ষিপ্ত জবাব- Big NO

উনাদের অবদানের কথা অস্বীকার করার উপায় নেই। যদিও তাঁদের জীবনদর্শন বা আইডিওলজির দ্বি-মত পোষণ করি, তাঁদের কমিউনিটি লেভেলের ডেডিকেশনের কথা আমার ক্লাসের শিক্ষার্থীদের সামনে তুলে ধরি।

কেন তাঁরা এ যুগের বাংলাদেশে হোঁচট খেতেন- 

তাঁদের সেসময়কার প্রেক্ষাপট তুলে ধরা দরকার ব্যাপারটা বুঝতে। পৃথিবী সেই সময় বিভিন্ন  আইডিওলজিক্যাল মুভমেন্টে  আলোড়িত হচ্ছিল। যার মধ্যে অন্যতম ছিল নারীবাদ, যৌন স্বাধীনতা (যৌন বিপ্লব), সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র- ইত্যাদি মতাদর্শ ফোকাস করে পৃথিবীর ফান্ডিং, বিতর্ক, অনুসারী তৈরীর প্রক্রিয়া কেন্দ্রীভূত ছিল।  

প্রসংগত বর্তমান সময়ের ফোকাস হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তন এবং এক যুগ আগে শুরু হওয়া এল/জি-বিটি ইস্যু। এগুলোকে কেন্দ্র করে ফান্ডিং, আলোচনা হচ্ছে পলিসি লেভেলে। 

উনারা সেই সময়ে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং ভাগ্যবান যে সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত দেশের উচ্চশিক্ষিত মানুষ ছিলেন যাদের চিন্তা-চেতনা, প্রশিক্ষণে পশ্চিমা দেশের ছোঁয়া ছিল। উনাদের সমাজ পরিবর্তনের জন্য প্রবল ইচ্ছার সাথে মধুর সম্মিলন ঘটেছিল সেই সময়ের প্রেক্ষাপট।

স্বাধীন দেশের পলিসি-নীতি-নির্ধারণী তৈরী করার পর্যাপ্ত যোগ্য লোকবল ছিল না। সেসময় উচ্চশিক্ষিত যোগ্যলোক এগিয়ে আসলে রাষ্ট্র পাশে দাঁড়িয়েছে।  যারা চেষ্টা করেছেন তারা বিভিন্ন লেভেলে সাপোর্ট পেয়েছেন।  

দুঃখজনক হলেও চরম সত্য যে বর্তমান সময়ে ফাউন্ডেশন/এনজিও খুলতে গেলে যে ঝাক্কি-ঝামেলা পোহাতে হয় তা কল্পনার বাইরে।  

তাই বিদেশী ফান্ডিং রিসিভ করাই অনেক কঠিন। তাছাড়া বিশ্বব্যাপী War on terror প্রজেক্টের কারণে ফান্ডিং যোগার করা আরো দুরূহ হয়ে গেছে। পশ্চিমা গোষ্ঠীর আস্থাভাজন ছাড়া সহজে ফান্ডিং মিলে না। 

ডা জাফরুল্লাহ, আবেদ এবং ইউনুস সাহেবদের এনজিও কর্মকান্ড যেন স্বাধীনভাবে চলতে পারে এজন্য সরকারও অনেক সাপোর্ট দিয়েছে, অর্থাৎ বাধা হিসেবে দাঁড়ায়নি। তাদের সময়ে আমলাতান্ত্রিক তেমন জটিলতা ছিল না। 

তাদের মূল চ্যালেঞ্জ ছিল আইডিয়া কিভাবে বাস্তবায়ন করবেন তা নিয়ে।

পরিবার-পরিকল্পনা তথা জনসংখ্যা কমানো, নারীর ক্ষমতায়ন- এগুলো ইস্যুতে দেশে পর্যাপ্ত পশ্চিমা ফান্ডিং হয়েছে। এগুলো উনারা স্মার্টলি কাজে লাগাতে পেরেছেন।

বর্তমানে দেশে প্রায় ১০ হাজার পিএইচডি ডিগ্রীধারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রয়েছেন যারা মূলত বিদেশে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। তাঁদেরও পজিটিভ কিছু করার ইচ্ছে ছিল।

কিন্তু দেশের রাজনীতির চরিত্র বদলে যাওয়া কারণে মেধা, মনন, উদ্দীপনা কাজে লাগানোর পরিবেশ গড়ে উঠেনি। একারণে শিক্ষকদের মধ্যে রাজনীতি ঢুকে যায় কেননা এর মাধ্যমে সরকারের বিভিন্ন পজিশন এবং সুবিধা পাওয়া যায়। 

নষ্ট রাজনীতির আবহে নৈতিকতার অধঃপতন ঘটে। তাই দেখা যায় যোগ্য মানুষ পলিটিক্যাল ব্যানারে বড় পজিশন হোল্ড করেও উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারেন না। আর যারা নীতিবান, কর্মঠ তারা নেগেটিভ পরিবেশে মনোবল হারিয়ে ফেলেন। 

সমাজের জন্য, মানুষের জন্য বড় কিছু করতে সত্যিকার অর্থে নৈতিকভাবে খুব স্বচ্ছ থাকতে হয় সেটা যেকোন আইডিওলজির ব্যানারেই হোক না কেন। 

বাস্তবতা- একটা কেইস স্টাডি 

শুনতে অবাক মনে হলেও আমার কাছে মনে হয় আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন কমিউনিটি লেভেলে পজিটিভ প্রভাব ফেলতে পারার যে সম্ভাবনা রয়েছে যা সম্ভবত অনেক প্রতিষ্ঠিত এনজিওওয়ালাদের নেই। 

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, তাদের কি তা করতে দেয়া হবে? পশ্চিমা বিশ্বের পলিসিমেকাররা কি এসমস্ত উদ্যোগকে সাপোর্ট দিবে? 

 প্রসংগত,  রকমারীর সোহাগ দেশে উদ্যোগ দাঁড় করাতে চেষ্টা করছেন, কিন্তু  জাস্ট আইডিওলজি (ইসলামি ঘরণা) বদলানোর কারনে তাঁকে বিভিন্ন লেভেলে সমস্যা মোকাবেলা করতে হয়। 

সোহাগের মত আরো অনেক যোগ্য মানুষ দেশে আছেন যারা সমাজের জন্য সত্যিকারে কিছু করতে চা্ন, কিন্তু তাদেকে সাপোর্ট দেয়া হবে? 

স্বাধীনতার ৫০+ বছরে দেশে বিভিন্ন সিন্ডিকেট তৈরী হয়েছে যারা শুধু তাদের মতাদর্শের লোকদের প্রমোট করে, বিভিন্ন লেভেলে সাপোর্ট করে। খুব ভাল করে খেয়াল করলে দেখবেন দেশের বড় এনজিওগুলোর সামাজিক পৃষ্ঠপোষকতা করে প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টার। 

তাই দেশে, প্রতিষ্ঠিত সিন্ডিকেট ভেঙ্গে নতুন বড় কিছু করা সত্যিই হিমালয় পর্বত মাথায় নেয়ার মত চ্যালেঞ্জ এই দেশে, এই সময়ে। 

মনে রাখতে হবে ব্যক্তিগত উদ্যোগ দিয়ে একটি রাষ্ট্র বেশী দূর আগায় না।

রাষ্ট্রের দায়িত্ব হচ্ছে ব্যক্তিগত উদ্যোগগুলো কাজে লাগিয়ে শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান তৈরী করা। আর এ জন্যই পজিটিভ রাজনৈতিক পরিবেশ অত্যাবশ্যক। 

Similar Posts