সমকামী এক্টিভিস্টদের গ্যাং এটাক: বাক-স্বাধীনতার কন্ঠরোধ
ট্রান্সফোবিক ট্যাগিং করে সমকামী গোষ্ঠীর লোকজন গ্রুপ এটাক করে প্রতিবাদকারীকে মানসিকভাবে ভয় পাইয়ে দিতে চেষ্টা করে। এরা ক্ষমতা এবং নেটওয়ার্কিং ব্যবহার করে। তারা যদি জিতে যায় তবে এধরণের সামাজিক ইস্যু নিয়ে কথা বলার মানুষ সহজে আর তৈরী হবে না।
একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সচেতনতা দরকার, বিশেষ করে যারা সামাজিক এবং ধর্মীয় মূল্যবোধ নিয়ে কাজ করছেন। এই ফিল্ডের এক্সপার্ট (৬ বছর লিংগ রূপান্তর ফিল্ডে National University of Singapore- এ পিএইচডি গবেষণা এবং দেশে ১১ বছর জনস্বাস্থ্য নিয়ে মাঠ পর্যায়ের গবেষণার অভিজ্ঞতা) হিসেবে নৈতিক এবং সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে সমকামিতা মতাদর্শ নিয়ে লেখালেখির কারনে আমেরিকার প্রবাসী একটি পরিচিত গ্রুপ (যার নেতৃত্বে রয়েছে ঢাবি মাইক্রোবায়োলজি ডিপার্টমেন্টের এলামনাই) সক্রিয় হয়ে মিথ্যা প্রচারণাসহ জেলে পাঠানোর হুমকি দেয়। তারা এমন অবস্থা তৈরী করার চেষ্টা করছে যেন দেশের চাকুরীদাতা প্রতিষ্ঠান আমার চাকুরী খেয়ে দেয়।
![](https://mshossain.com/wp-content/uploads/2023/11/image-11-1024x471.png)
গত বছর (২০২২) জুলাইতে এই গ্রুপ অস্ট্রেলিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে (যেখানে Honorary Associate Professor হিসেবে জড়িত) অনেকে ইমেল করে ট্রান্সফোবিক হিসেবে অভিযোগ করে। ঘটনার সূত্রপাত হয়েছিল ফেসবুকের একটি স্বাভাবিক পোষ্টকে কেন্দ্র করে। Elsevier পাবলিশারের এক জার্নালে রিসার্চ পেপার জমা দেয়া ছিল। কিন্তু হঠাত দেখি সেখানের সিস্টেম এক্সেস দিচ্ছে না। জার্নাল কতৃপক্ষের আরোপিত এলজিবিটি পলিসির অংশ হিসেবে সবাইকে একটি জরীপে অংশ নিতে বাধ্য করে। কেন আমাকে জোর করা হচ্ছে – এর প্রতিবাদে ফেসবুকে একটি পোষ্ট দিয়েছিলাম। কয়েক হাজার বাংলাদেশী সমকামী এক্টিভিস্ট মাঠে আমার বিরুদ্ধে অনলাইন ক্যাম্পেইন শুরু করে। তারা এমনকি সেই এলাকার সাংবাদিকদের সাথেও যোগাযোগ করে যাতে চাপে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয় আমার এফিলিয়েশন কেড়ে নেয়।
এই বিষয়ে ইউনিভার্সিটির সাথে জরুরী মিটিং হয়। বিশ্ববিদ্যালয় অথোরিটি আমার প্রশ্নের তেমন জবাব দিতে পারেনি। দেশী এক্টিভিস্টদের ইমেলে তারাও বিরক্ত, কিন্তু এলজিবিটি ইস্যুতে তারাও মুখ খুলতে ভয় পান। অবশেষে তাদের পরামর্শ মত সোস্যাল মিডিয়ায় প্রাতিষ্ঠানিক এফিলিয়েশন উঠিয়ে দিয়েছি। অর্থাৎ আমার বক্তব্য কোন প্রতিষ্ঠানকে প্রতিনিধত্ব করে না।
![](https://mshossain.com/wp-content/uploads/2023/11/image-15-1024x452.png)
মানুষের জন্মগত লৈংগিক পরিচয়কে (Sexual identity) ভিত্তি করে হাজার হাজার বছর ধরে সামাজিক রীতি-নীতি, আইন-কানুন গড়ে উঠেছে। কমপক্ষে ৪০০০ বছর আগে সমকামিতার কার্যকলাপের জন্য কাওমে লুত সম্প্রাদায় ধবংসপ্রাপ্ত হয়েছিল যা মুসলিম, খৃস্টান এবং ইহুদি ধর্মে গ্রন্থে এসেছে। সামাজিক সিস্টেম অক্ষুন্ন রাখতে সমকামিতা মতাদর্শ বা আইডেন্টিটি সব ধর্মে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। ১৯৫০ সালের পর থেকে হেমোসেক্সুয়াল বা সমকামিতা পরিচয় (Gender identity) মুভমেন্ট শুরু হয়।
বর্তমান সময়ে এই মুভমেন্ট এত বেগবান হয়েছে যে মাত্র ১% এলজিবিটি সম্প্রাদায়ের লোক হয়েও বিশ্বের ৯৯% মানুষের টুটি চেপে ধরেছে। বিশ্বের ক্ষমতাধর বিজনেসম্যান, বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি, রাজনীতিবিদ, বিনোদন কর্মী, জার্নালিস্টদের সমন্বয়ে এমন এক ত্রাসের রাজ্য কায়েম করেছে যে এই বিষয়ে কথা বলতেও প্রতিবাদকারীদের মানসিকভাবে ভয় কাজ করে।
হেট স্পিচ বা ট্রান্সফোবিক ট্যাগ দিয়ে সমকামী গ্রুপ বিখ্যাত গল্প Harry Potter এর লেখিকা JK Rowling কে একঘরে করে ফেলে। তিনি জোর দিয়ে বলেছিলেন- শুধু মেয়েদেরই মাসিক হয় (menstruation) হয়, ছেলেদের হয় না। অন্যদিকে বিবর্তনবাদী অক্সফোর্ড প্রফেসর রিসার্চ ডকিন্স মন্তব্য করেছিলেন যে মানুষে শুধু নারী পুরুষ হয়, অর্থাৎ বাইনারি। এলজিবিটি গ্রুপ বাইনারি সিস্টেম অস্বীকার করে নন-বাইনারী প্রমোট করে যার সায়েন্টিফিক কোন ভিত্তি নেই। ট্রান্সজেন্ডার মূলত ল্যাংগুয়েজ মুভমেন্ট যেখানে শব্দের জাদুতে সাধারন মানুষকে সম্মোহিত করতে পারে। প্রফেসর ডকিন্সকে ট্রান্সফোবিক হিসেবে আখ্যায়িত করে ২৫ বছর আগের এওয়ার্ড ফিরিয়ে নিয়েছে আমেরিকান হিউমিনিস্ট সংস্থা!
কাওমে লুত ইস্যুতে পৃথিবী থেকে নারীদের নিশ্চিহ্ন করার প্রতিবাদের প্রফেসর সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ক্যাথলিন স্টককে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে। একাডেমিশিয়ান হিসেবে বলেছিলেন মানসিক ইচ্ছার উপর দাঁড়িয়ে উঠা জেন্ডার আইন্ডেন্টিটি (Transwomen are women) আইনত বাস্তবায়ন করলে,পুরো পৃথিবীর সামাজিক সিস্টেম ভেংগে পড়বে। ফলশ্রুতিতে জন্মগত নারীদের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে। প্রফেসর স্টক জেন্ডার আইন্ডেন্টিটি মুভমেন্টের সমস্যা কোথায় তা নিয়ে অক্সফোর্ড ইউনিয়নে এক বিতর্কে অংশগ্রহণ নিয়ে পুরো ইংল্যান্ডে তোলপাড় হয়। তাঁকে বিতর্কের অনুষ্ঠানে বাধা দিতে ট্রান্স এক্টিভিস্টরা রাস্তায় শুয়ে পড়ে, হলরুমেও এটাক করার চেষ্টা করে। প্রফেসর স্টকের ইস্যুতে অক্সফোর্ডের প্রফেসররাও বিভক্ত হয়ে যান। ১০০ জন ফ্যাকাল্টি এলজিবিটি গোষ্ঠীর পক্ষ নেন। অন্যদিকে ৪০ জনের মত ফ্যাকাল্টি বাক-স্বাধীনতা পক্ষে অবস্থান নেন।
আমেরিকা প্রবাসী একাডেমিক ফিল্ডের কিছু লোক একাট্টা হয়ে ট্রান্সফোবিক হিসেবে ট্যাগিং করে ধর্মীয় মৌলবাদের যুক্ত করে। দেশের প্রেক্ষাপটে মানসিকভাবে ঘায়েল করতে এই খুব কমন একটি স্ট্র্যাটেজি ব্যবহার করে। তাদের সেই পোষ্টে হাজির হোন দেশের ট্রান্সজেন্ডারিজম মুভমেন্টের মিডিয়া ব্যক্তিত্ব যিনি অত্যন্ত বড়াই করে ভিডিও সাক্ষাতকারে বলেছিলেন- তিনি পুরুষ হয়েও নারী (ভিডিও- I have penis but I am women). প্রথম আলো সেই এক্টিভিস্ট নিয়ে অনেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে এবং একটি বিশ্ববিদ্যালয় তাকে নিয়ে গর্বও করে। প্রথম আলো তার MPH ডিগ্রী নিয়ে স্পেশাল প্রতিবেদন ছেপেছে। ট্রান্সজেন্ডার নারীর (আদতে পুরুষ) মহিলা হোস্টেলে সিট পেতে সেই এক্টিভিস্ট নেপথ্যে কাজ করেছে।
প্রসংগত, ট্রান্সজেন্ডারিজমের আলোকে নারী অধিকার কোথায় গেলো? আপনার মেয়ের হোস্টেল রুমে তাদের উপস্থিতি কি নিরাপদ ভাববেন?
সেই পোষ্টে আমেরিকার প্রবাসী আরেকজন একাডেমিশিয়ান (ইসলাম বিদ্বেষী হিসেবে কমিউনিটিতে পরিচিত) পরামর্শ দেন যাতে আমার বিদেশী কলাবোরেটরদের সাথে যোগাযোগ করে। জানা দরকার যে পশ্চিমা দেশে ট্রান্সফোবিক প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ভয়ংকর অপরাধ হিসেবে গণ্য করা। সমকামিতা পরিচয়ে যারা বিশ্বাস করে না এমন কেউ সরব হলে তাকে এই ট্যাগ দেয়া হয়। সবচেয়ে অবাক হয়েছি আমার বর্তমান প্রতিষ্ঠানের কলিগ Baten Mohammad (বর্তমানে আমেরিকায় পিএইচডি করছেন) যার সাথে আমার তেমন কোন ইস্যু ছিল না। তিনি সমকামী এক্টিভিস্ট হিসেবে হাজির হয়ে আমাকে ‘Cancer’ হিসেবে ট্যাগিং করেন। এরপর তিনি আমার জব খেতে দিতে হুমকি দেন!
![](https://mshossain.com/wp-content/uploads/2023/11/image-12-1024x406.png)
এখানে কিছু কথা বলা দরকার। একাডেমিশিয়ান হিসেবে আমার এচিভমেন্ট আন্তর্জাতিক স্টান্ডার্ড অনুযায়ী ভাল বলা যায়। আমার গবেষণা, লেখালেখি, এবং সোস্যাল এক্টিভিজম বিশ্ববিদ্যালয়ের পজিটিভ ভাবমূর্তি গড়তে সহয়তা করছে। আমাদের সন্তান, শিক্ষার্থী, এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের মারাত্নক সামাজিক অবক্ষয়ের সম্মুখীন হতে যাচ্ছে জেনে একজন শিক্ষক এবং গবেষক হিসেবে চুপ থাকা অনৈতিক মনে হয়।
সমকামী এক্টিভিস্টরা আমাকে থামাতে টার্গেট করেছে। তারা যদি জিতে যায় তবে এধরণের সামাজিক ইস্যু নিয়ে কথা বলার মানুষ সহজে আর তৈরী হবে না। মনে রাখবেন, এ বিষয়টা নিয়ে ওরা আগাতে পারছে কারণ বেশিরভাগ মানুষ ব্যাপারটা সম্পর্কে জানে না, বোঝে না। এটা নিয়ে যতো কথা হবে, এই এজেন্ডার বাস্তবতা যতো বেশি মানুষের সামনে আসবে, ততো এটা ওদের জন্য সমস্যা তৈরি করবে। কারণ মানুষ একবার বাস্তবতা বুঝলে অবশ্যই এই এজেন্ডার বিরুদ্ধে দাঁড়াবে।
সমকামিতা মুভমেন্ট ইস্যুটি বুঝতে কালবেলা পত্রিকায় প্রকাশিত আর্টিকেল পড়া উচিত- হিজড়া ও ট্রান্সজেন্ডার শব্দের অস্পষ্টতায় দেশে ভয়াবহ বিপর্যয়ের ঝুঁকি